বিলুপ্তির পথে শুশুক

প্রকাশঃ মে ২৮, ২০১৫ সময়ঃ ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতক্ষণ ডেস্ক

shushukবাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ছে খুব দ্রুত আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ। প্রাকৃতিক সম্পদের উপর এই চাপের কারনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিতে বিচরণকারী প্রাণীরা।

বাংলাদেশ, পানির দেশ৷ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে পড়ে এই অঞ্চল৷ এখানকার মানুষের জন্য পানি সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু বড়াল নদীর তীরের বাসিন্দাদের কাছে এই পানিই কখনো বন্ধু, কখনো শত্রু৷ কখনো প্রাচুর্য, কখনো অভাব৷ গত প্রায় ৩ দশকে এই নদীকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাঁধ তৈরি সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷

এই প্রক্রিয়ায় গোটা অঞ্চলে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে৷ শাখানদী শুকিয়ে গেছে, বিরল প্রজাতির প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে৷ ফলে পরিবেশবাদীরা শঙ্কিত৷ ৩০ বছর আগে শয়ে শয়ে শুশুক দেখা যেত৷ আজ বড়াল নদীতে তাদের খুঁজে পেতে সৈয়দ আজহারকে অনেক ধৈর্য ধরতে হয়৷ সৈয়দ আলী আজহার জানালেন, কী ভাবে ডলফিনদের আদর করে শুশুক বলা হয়৷
গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুক দলবদ্ধ নয়, একাই থাকে৷ বর্ষাকালে তারা উজানের দিকে চলে যায়, যেখানে শাখানদীগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে৷ পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আজহার বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির অনেক জায়গায় পলি পড়ে গেছে৷ ফলে শুশুকরা এখানে চলে এসে বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷”

বাচ্চাদের জন্য নদীর গেটগুলি খেলার জায়গা৷ তবে বেশিরভাগই পুরানো হয়ে গেছে, আর ব্যবহার করা হয় না৷ তার পিছনের জমি শুকিয়ে গেছে৷ ফলে অনেক প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র ছোট হয়ে গেছে৷ এবার এক প্রকল্পের আওতায় নদীর গভীরতা বাড়ানো হচ্ছে, যাতে গরমকালেও পানি শুকিয়ে না যায়৷ সৈয়দ আলী আজহার বলেন, ‘‘নদী গভীর হলে হারিয়ে যাওয়া অনেক বিপন্ন প্রাণী আবার ফিরে আসবে৷ এবার তারা ফিরে এসে বংশবৃদ্ধি করবে, এভাবে জীববৈচিত্র্য আরও বেড়ে যাবে৷”

মানুষের বোধোদয় ঘটলে তবেই জীববৈচিত্র্য ও মাছের সংখ্যা বেড়ে যায়৷ তাদের ভবিষ্যৎ মানুষেরই হাতে৷ রামচরণ হালদার প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে মাছ ধরছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব মাছ ধরে, বিক্রি করে তাদের নিশ্চিহ্ন তরে দিয়েছি৷ মাছ উধাও হয়ে গেছে, আমরা বিহ্বল হয়ে পড়েছি৷ নদীগুলির সঙ্গে সংযোগও আর নেই৷ থাকলে কিছু মাছ পাওয়া যেত৷”

তিনি আরও জানেন, এটা তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন৷ তাই তিনি এখন নতুন সংরক্ষিত এলাকায় কাজ করছেন৷ এই লাঠিগুলি জাল ফেলা আটকে দেয়৷ মাছেদের বিচরণের এই নতুন এলাকা তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ফলে মানুষেরও খাদ্য হবে৷ বাংলাদেশের মানুষের প্রাণিজ প্রোটিনের একটা বড় উৎসই হলো মাছ৷

শুশুকের কী হবে? তাদের জন্যও রয়েছে নতুন সংরক্ষিত এলাকা৷ সৈয়দ আলী আজহার বলেন, ‘‘মাঝেমাঝে কিছু লোক মাছ চাষের চেষ্টা করে৷ কিন্তু জেলেরা তাদের রক্ষা করে৷ তারা এখানে সত্যিই সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু আমাদেরই সেই কাজ করতে হবে, কারণ তারা তো সবে শুরু করেছে৷”

প্রায় ২২০ কিলোমিটার লম্বা বড়াল নদীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷ মানুষ ও শুশুকের অস্তিত্বের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি৷

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G